ঈদ অর্থ খুশি; ঈদ অর্থ হাসি। ঈদ অর্থ দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে একসাথে আনন্দে মেতে উঠা; যাবতীয় ভেদাভেদ দূর করে আনন্দ ভাগাভাগি করা। ঈদ আসে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও ভালাবাসার বন্ধন সুদৃঢ় করতে; মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে আলোকিত সমাজ গঠনের প্রশিক্ষণ দিতে। এ
ঈদের দিনে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে পারে রাসূল (সা.) নির্দেশিত ও প্রদর্শিত বিশেষ কাজ ও আমল। এমন কতক বিশেষ বিশেষ কাজ ও আমল নিচে উল্লিখিত হল :
১। তাকবীর বলা:
ঈদের চাঁদ দেখে তাকবীর বলা আবশ্যক (কুরতুবি ৩/৪৭৯)
আর তাকবীর হলো :
الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله الله أكبر الله أكبر ولله الحمد. (ইবনে আবি শাইবাহ : ৫৬৫২)
২। গোসল করা:
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন গোসল করতেন।
(সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩১৫)
৩। ভালো কাপড় পরিধান করা:
অর্থাৎ বিদ্যমান কাপড় সমূহ থেকে সর্বোৎকৃষ্ট কাপড় পরিধান করা; নতুন কাপড় পরিধান করার জরুরি নয়।
হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবী (সা.) এর একটি জোব্বা ছিল, যেটি তিনি দুই ঈদ (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) ও জুমার দিন পরিধান করতেন।
(সহীহ ইবনে খুজাইমা : ১৭৬৬)
৪। ঈদের নামাজ ঈদগাহে আদায়:
ঈদের নামাজ ঈদগাহে আদায় করা সুন্নাত, তবে ঈদগাহের ব্যবস্থা না থাকলে মসজিদে আদায় করা যাবে।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহতে পৌঁছে সর্বপ্রথম সালাত আদায় করতেন।
(সহীহ বুখারী : ৯৫৬)
৫। কোন কিছু খাওয়া:
ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে বেজুড় সংখ্যক খেজুর বা মিষ্টান্ন খাওয়া, আর ঈদুল আযহার দিন নামাজের পূর্বে কোন কিছু না খেয়ে বরং একেবারে কুরবানির গোস্ত খাওয়া-ই সুন্নাত।
হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসুল (সা.) কিছু সংখ্যক খেজুর না খেয়ে ঈদুল ফিতরের দিন বের হতেন না।
(সুনানে ইবমে মাজাহ : ১৭৫৪)
হযরত ইবনে বুরাইদা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খেয়ে বের হতেন না আর কোরবানির দিন ঈদগাহ থেকে ফিরে (রান্নাকৃত তাজা কোরবানির গোস্ত) খেতেন।
(সুনামে ইবনে মাজাহ : ১৭৫৬)
৬। পায়ে হেঁটে ঈদগাহতে যাওয়া:
হযরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) পায়ে হেঁটে ঈদগাতে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে (ইদগাহ থেকে) ফিরতেন।
(সুনানে ইবনে মাজাহ – ১২৯৪)
৭। বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঈদগাহতে যাওয়া (ইবনে খুজাইমা : ১৪৩১)
৮। সাদাকাতুল ফিতার আদায়:
ঈদগাতে যাওয়ার আগে সাদাকাতুল ফিতার আদায় করা সুন্নাত।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) লোকদেরকে ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে সাদাকাতুল ফিতার আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
(সহীহ মুসলিম : ৯৮৬)
৯। তাকবীর পাঠ:
ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহ-তে যাওয়ার সময় আওয়াজ করে করে তাকবীর বলা, এবং ঈদুল ফিতরের দিন আস্তে আস্তে তাকবির বলা সুন্নাত।
১০। এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহতে গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে ঈদগাহ থেকে ফিরে আসা:
হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসুল (সা.) ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা দিয়ে (ঈদের দিন) যাতায়াত করতেন।
(সহীহ বুখারি : ৯৮৬)
১১। ঈদের সালাত:
ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব সালাত আজান ও ইকামত ছাড়া আদায় করা সুন্নাত।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ঈদের দিন আজান ও ইকামত ছাড়া সালাত আদায় করতেন।
(ইবনে মাজাহ : ১২৮৪)
১২। ঈদের সালাতে সূরা পাঠ:
ঈদের সালাতের প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা গাশিয়াহ পড়া সুন্নাত।
হযরত নোমান বিন বশির (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.) দুই ঈদ ও জুমার সালাতে سبح اسم ربك الأعلى তথা সুরা আ’লা ও هل اتاك حديث الغاشية তথা সূরা গাশিয়াহ পড়তেন।
(সহীহ মুসলিম : ৮৭৮)
১৩। ঈদের সালাতের পর খুতবা দেওয়া:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিন সালাত আদায় করতেন, এবং সালাতের পর খুতবা দিতেন।
(সহীহ বুখারী : ৯৫৭)
১৪। খুতবা শুনা বা না শুনা উভয়ের স্বাধীনতা:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সায়িব (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) ঈদের সালাত শেষে বললেন, যে চলে যাওয়া ভালো মনে করে সে যেন চলে যায়, আর যে খুতবা শ্রবণের জন্য অপেক্ষা ভালো মনে করে সে যেন অপেক্ষা করে।
(সহীহ মুসলিম : ১৫৭১)
১৫। খোতবার সময় চুপ থাকা এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনা:
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ইমামের খুতবা দেয়াকালীন তুমি যদি তোমার সাথীকে বলো, “নীরব থাকো” তাহলে তুমি একটি অনর্থক কাজ করবে। (সুনানে নাসায়ী : ১৯৭৭)
১৬। ঈদগাহ-তে নফল সালাত আদায়:
ঈদগাহ-তে ঈদের নামাজের আগে পরে কোন প্রকার নফল নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ঈদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে (কেবল ঈদের) সালাত আদায় করেছেন এর আগে-পরে কোন প্রকার নামাজ পড়েননি। (ইবনে মাজাহ : ১২৯১)
১৭। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন:
ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বাণী, ‘تقبل الله منا ومنكم বলে জ্ঞাপন করা।
(ফাতহুল বারি : ২/৫১৭)
১৮। আল্লাহর নাফরমানি হয় না এমন ক্রীড়া কৌতুক জায়েজ:
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর (রা.) আমার নিকট আসলেন, এ সময় আনসার সম্প্রদায়ের দুটি মেয়ে গান গাচ্ছিল। আনসারগণ বুয়াস যুদ্ধের সময় এই গানটি গেয়েছিল। আয়েশা বললেন, অবশ্য তারা (পেশাগত) গায়িকা ছিল না। তা দেখে আবু বকর (রা.) বললেন, একি! তখন রাসূল (সা.) বললেন, আবু বকর প্রত্যেক জাতির জন্য উৎসবের ব্যবস্থা আছে, আর এটা হচ্ছে আমাদের উৎসবের দিন।
(সহীহ মুসলিম : ১৯৪৬)
১৯। রোজা না রাখা:
হযরত কাজা’আ (রা.)থেকে বর্ণিত, আমি আবু সাঈদ খুদরী (রা.)-কে রাসূল (সা.) হতে চারটি বিষয়ে বর্ণনা করতে শুনেছি, যা আমাকে আনন্দিত ও মুগ্ধ করেছে। তিনি বলেছেন, ….ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনগুলোতে সিয়াম নেই।
(সহীহ বুখারী : ১১৯৭)
২০। রাত জেগে ইবাদত করা:
হযরত আবু উমামা নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, যে দুই ঈদের দিন সওয়াবের নিয়তে রাতে দাঁড়িয়ে ইবাদাত করবে, তার অন্তর সেদিন মারা যাবে না যেদিন মানুষের অন্তরসমূহ মারা যাবে। অর্থাৎ শেষ জমানায় নানা ফেতনা-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয়ে যখন মানুষের অন্তর মারা যাবে বা মানুষ আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল হয়ে যাবে, তখন তার অন্তর আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকার কারণে জীবিত থাকবে।
(ইবনে মাজাহ : ১৭৮২ )
ঈদ হলো রমজানের পুরস্কার। রমজানে যেভাবে আমরা আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি, সেভাবে আমাদের পুরো জীবন আল্লাহর ভয়ে বেঁচে থেকে আখিরাতে আনন্দ উপভোগ করতে পারলেই আমাদের ঈদ পূর্ণতা পাবে। সুতরাং এখন থেকে তার প্রস্তুতি নেওয়া আবশ্যক।
সালমান আজিজ, ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন:
ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদের ইফতারে গণ মানুষের ভিড় বাড়ছে
উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত সংশোধনের জন্য উকিল নোটিশ
আরও খবর পেতে যুক্ত থাকুন CoxsbazarNEWS.com এর সাথে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।